রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা “ছুয়ে দিলে মন”-এর প্রদর্শনী নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে আগামী ৭, ৮ ও ৯ জুন সিনেমাটি প্রদর্শিত হবে। ‘রলিক মিডিয়া প্রডাকশন’ নামের একটি সংগঠন এ সিনেমা প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিভাবে এ বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা মিলনায়তনের মতো একটি জায়গাতে প্রদর্শনের অনুমতি দিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে আগামী ৭,৮,ও ৯ জুন বিকেল সাড়ে তিনটা ও সন্ধ্যা ছয়টায় শিহাব শাহীন পরিচালিত সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা “ছুঁয়ে দিলে মন”-এর প্রদর্শনী করতে যাচ্ছে রলিক মিডিয়া প্রডাকশন। এর আগেও বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক, ইতিহাস-ঐতিহ্য বা শিক্ষণীয় স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচিত্র প্রদর্শনী হয়েছে। এছাড়া মানবিক সাহায্যের ফান্ড কালেকশনের জন্যও চলচিত্র প্রদর্শনী হয়ে থাকে। তবে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা এভাবে কখনো প্রদর্শিত হয়নি।
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন স্থানে, পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো ও প্রতিটি আবাসিক হলের গেটের সামনে ও হলের ভিতরে সিনেমাটির বড় বড় পোস্টার লাগানো হয়েছে। এদিকে হলের ভেতরে এই ধরনের বাণিজ্যিক চলচিত্রের পোস্টার দেখে অনেক শিক্ষার্থীকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
এদিকে বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্র ক্যাম্পাসে প্রদর্শনীর ঘোর বিরোধিতা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় এ ধরনের সিনেমা প্রদর্শন ক্যাম্পাসের সুস্থ ধারার সাংস্কৃতির জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মনে করছেন অনেকে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আয়াতুল্লাহ খমেনী বলেন, ‘বাণিজ্যিক মুভি ক্যাম্পাসে প্রদর্শন করা উচিত নয়। আর প্রশাসন কিভাবে তাদের এই প্রদর্শনীর অনুমতি দেয়, আমি এটা বুঝি না? এছাড়া রাতের আধারে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে সিনেমার পোস্টারিং করেছে, এটা ঠিক না।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আসাদুল হক নামে এক শিক্ষার্থী লিখেন, ‘রাতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ঢুকতেই চোখে পড়ল গেইটের ডানদিকে বিশাল পোস্টার লাগানো। দেখেতো চোখে ছানাবড়া অবস্থা। একটা ছবির পোস্টার লাগানো। পাশে আরও কয়েকটি পোস্টার রয়েছে। ছবির নাম “ছুয়ে দিলে মন”। গেইটে দায়িত্বে থাকা রঞ্জু ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম কি অবস্থা তিনি কোনো কিছুই বলতে পারলেন না। অন্য হলগুলোতে একই অবস্থা কিনা জানি না। তবে এই ধরনের কাজ নেহায়েত সমর্থনযোগ্য যেমন নয় তেমনি ঘৃণারও বিষয়”।
তিনি আরো লিখেন, ‘আবার শুনলাম কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে নাকি ঐ ছবি দেখানো হবে। এটা কোন ধরনের ফাজলামি। হ্যাঁ আমরাও মিলনায়তনে ছবি দেখেছি আর তা ছিল শিক্ষামূলক অথবা ইতিহাসভিত্তিক ছবি বা ডকুমেন্টারি। এতে কোনো দোষ নেই। কিন্তু এভাবে বাণিজ্যিক ছবি প্রদর্শন করতে হবে কেন?’
সিনেমাটির আয়োজক রলিক মিডিয়ার পরিচালক এম কবির বলেন, ‘এটা বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্র ঠিক আছে, তবে এই চলচিত্রের কথাপোকথন থেকে শুরু করে সবকিছুর মধ্যে শেখার অনেক কিছু আছে। এছড়া এই মুভির সাথে জড়িত কলা-কুশলীরাও এখানে আসবেন”।
এ ব্যাপারে বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ছাদেকুল আরেফিন মাতিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্যিক চলচিত্র প্রদর্শনী কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা সুস্থ ধারার সাংস্কৃতির জন্য হুমকিস্বরূপ”। তবে কে বা কারা প্রদর্শনীর অনুমতি দিয়েছে এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসির পরিচালক টি এমএম নূরুল মোদ্দাসের চৌধুরী বলেন, ‘তারা (আয়োজকরা) এক শিক্ষকের সুপারিশ নিয়ে আসছিল, যার কারণে আমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের অনুমোদন দিয়েছি”।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকার কারণে এমনটা হচ্ছে, আগামীতে মিলনায়তন বরাদ্দের ব্যাপারে নীতিমালা করা হবে।’
0 comments:
Post a Comment